তৃণমূল প্রতিবেদক, তানোর:
আলুর বীজের সংকটের পর সারের সিন্ডিকেট কিছুতেই থামছেনা। আলু রোপনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত সার নিয়ে মহা কারসাজি করেই চলেছেন রাজশাহীর তানোরে বিসিআইসির ও বিএডিসি সার ডিলারেরা বলে অভিযোগ তুলেছেন আলু চাষীরা। এযেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। সার সংকট সিন্ডিকেট নিয়ে একাধিক জাতীয় স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কোন দায়িত্ব নেই কৃষি দপ্তর ও উপজেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির। দেদারসে বুক ফুলিয়ে ন্যায্য দামের চেয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে বাড়তি নিলেও কোন তদারকি নেই কর্তৃপক্ষের। যার কারনে দীর্ঘ সময় ধরে সার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃষকের পকেট কাটলেও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই কর্তা বাবুদের। সবকিছু যেনেও যেন অজানার ভান করে ঠান্ডা ঘরে বসে আয়েশ করছেন কর্তৃপক্ষরা। এবার ডিএপি সার নিয়ে মহা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে প্রকাশ্যে বাড়তি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
গত বৃহস্পতিবার হিমাগারে আলুর ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে চাষীরা সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, শুধু হিমাগারে আলুর ভাড়া বৃদ্ধি না। সার ব্যবসায়ীরা কারসাজির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়তি দাম নিচ্ছেন প্রকাশ্যে। কিন্তু কৃষি দপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন নিরব ভূমিকায় আছে। অতীতে সিন্ডিকেট হয়েছে। প্রশাসনও অভিযান চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করছেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর প্রশাসন গা ছাড়া হয়ে বসে আছেন। প্রতি নিয়তই এসব হলেও কোন নজর নেই। প্রশাসনে স্বৈরাচারের দোসররা বর্তমান সরকার কে বেকায়দায় ফেলতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে এক সময় কৃষকরা রাজপথে নেমে পড়লে সামাল দিতে পারবেন না। সুতরাং এখনই অভিযান চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। কারন এত ক্ষমতাধর হওয়ার পরও ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন স্বৈরাচার হাসিনা। এই কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করছে বলেই ঠান্ডা ঘরে বসে আয়েশ আরাম করছেন। সভা শেষে উপজেলা মোড়ে আলু চাষী হাবিবুর বলেন, বর্তমানে আলুর জমিতে ডিএপি সারের প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি মূল্যে পাওয়া যাচ্ছেনা। বাড়তি দাম দিলেই মিলছে ডিএপি সার। সরকারি মূল্য ১০৫০ টাকা। কিন্তু ডিলারেরা ১৪৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা করে বিক্রি করছে। রোপনের সময় থেকে চলছে এই কারসাজি। কখনো টিএসপি নিয়ে সিন্ডিকেট, কখনো ইউরিয়া সার নিয়ে সিন্ডিকেট। এখন শুরু হয়েছে ডিএপি সার নিয়ে। রাশিদুল নামের আরেক আলু চাষী জানান, ডিএপি সার কিনেছি ১৪৫০ টাকা করে। কিছুই করনীয় নাই। তারা যা বলবেন সেটাই শেষ কথা। সরকারি মূল্যে সার নিতে হলে লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হবে। এক বেলা লাইনে দাড়িয়ে থেকে হয় তো এক বস্তা সার পাওয়া যাবে। এসিন্ডিকেট আলু রোপনের সময় থেকে শুরু হয়েছে যা এখনো বহাল রয়েছে। অথচ কৃষকদের রক্ত ঘামের ফসলের কোন মূল্য নেই। উপজেলায় কি পরিমান আলু চাষ হয়েছে, কি পরিমান সারের প্রয়োজন সেটা তো কৃষি দপ্তরের জানার কথা। কিন্তু তাদের বক্তব্য একটাই কৃষকরা প্রচুর বাড়তি সার ব্যবহার করে। কৃষি দপ্তরের হিসেবে সার ব্যবহার করলে কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাবেনা।
ডিএপি সার খুচরা বাজারে ২১ টাকা ও খুচরা ডিলারের কাছে ১৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু এই নিয়ম কোন ডিলার মানে না। তবে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ ডিএপি সারের সংকট ও বাড়তি দামের কথা মানতে নারাজ। তিনি জানান, প্রতিটি ডিলারের গুদামে পর্যাপ্ত ডিএপি সার রয়েছে। যে কৃষক সার পাচ্ছে না বা কোন ডিলার বাড়তি দাম নিলে আমার নিকট অভিযোগ দিতে বলেন। যদি কোন ডিলার বাড়তি দাম নেয় প্রমান হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু কৃষি অফিসারের এমন কথা মানতে পারছেনা আকু চাষীরা। তারা জানান প্রতি নিয়তই পার্শ্ববর্তী মোহনপুর, মান্দা ও গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাই পথে সার আসছে। আর এসব সারের গুনগত মান সঠিক কিনা বোঝার উপায় নেই। বাহির থেকে সার বাড়তি দামে এনে বাড়তি দামে বিক্রির জন্য ক্ষোদ কৃষি দপ্তর অনুমতি দিয়েছেন। সরকারি বরাদ্দের সার দিয়ে প্রায় ১৪/১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হবে না। এজন্য ডিলারদের সার আনার অনুমতি দেয়ার কারনেই মহা কারসাজি চলছে।
প্রকাশকঃ তৌফিকুল ইসলাম, মিলিয়ন গ্রুপ কর্তৃক প্রকাশিত।
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত